logo

আবু সাঈদকে নিয়ে ফেসবুক কটুক্তির জেরে স্কুুল ছাত্র গ্রেফতার, তিনদিন পর জামিন

আবু সাঈদকে নিয়ে ফেসবুক কটুক্তির জেরে স্কুুল ছাত্র গ্রেফতার, তিনদিন পর জামিন

পুলিশ পরিচয়ে রাস্তা থেকেই তুলে নেয়া হয় স্কুল শিক্ষার্থীকে। পরে থানা থেকে ফোন করে পরিবারকে জানানো হয় তার গ্রেফতারের খবর। আনতে বলা জন্ম নিবন্ধন সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজ। পরদিন সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের মামলায় চালান করা হয় আদালতে।

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার সান্দিকোনা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ঘটেছে এমন ঘটনা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রংপুরে নিহত আবু সাঈদকে নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দিয়েছে সে।

পুলিশ বলছে, ফেসবুক পোস্ট নিয়ে সান্দিকোনা গ্রামে উত্তেজনার খবর পেয়েই অভিযুক্ত ছাত্র সুমন আহমেদকে হেফাজতে নেয়া হয়। গত ২৭শে জুন রাতে নিজেরাই বাদি হয়ে ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা করে পুলিশ।

জন্ম নিবন্ধন হিসাবে তার বয়স আঠারো বছর বলে পরিবার জানিয়েছে।

কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, "ওয়ান সিক্সটিফোর করে নাই, তবে প্রাথমিকভাবে সে আমাদের কাছে ফেসবুক পোস্ট দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে।"

অভিযুক্ত স্কুল ছাত্র সুমন আহমেদের পিতা রফিকুল ইসলাম জানান, সন্ধ্যার আগে আগে পুলিশ রাস্তা থেকে ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে, তাকে কিছু জানানো হয়নি।

ছেলের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে তেমন কিছু জানেন না বলে দাবি করেন মি. ইসলাম। তিনি বলেন, স্থানীয় রাজনীতির সাথেও তার ছেলে যুক্ত নয়।

যদিও ওই স্কুল শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেছেন কেন্দুয়া উপজেলা আহত জুলাই যোদ্ধা সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম জাসাম।

সোমবার ওই ছাত্রকে জামিন দিয়েছে নেত্রকোনা জেলা জজ আদালত।

ঘটনা সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

গত ২৭শে জুন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত আবু সাইদকে নিয়ে একটি ফেসবুক পোস্টে আপত্তিকর মন্তব্য করার বিষয়টি আলোচনায় আসে।

জানা যায়, ফেসবুক পোস্ট ঘিরে নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার সান্দিকোনা গ্রামের স্কুল ছাত্র সুমন আহমেদকে আটক করেছে পুলিশ।

এই ঘটনায় ওই এলাকায় বিক্ষোভ করে আহত কেন্দুয়া উপজেলা জুলাই যোদ্ধা নামের একটি সংগঠন। তাদের দাবি, ছাত্রটি নিজের ফেসবুকে অশালীন মন্তব্য ও ব্যঙ্গাত্মক ইমোজি জুড়ে আবু সাঈদকে নিয়ে একটি ছবি পোস্ট করেছেন।

এ খবর শুনে শুক্রবার রাত ৮টার দিকে কেন্দুয়া শহরে বিক্ষোভ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। তারা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে অভিযুক্ত ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

সান্দিকোনা গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত ছাত্রটি স্থানীয় উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবার সঙ্গে রাজমিস্ত্রির কাজও করে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে কয়েকজনের ভাষ্য সেই ছাত্র ও তার পরিবারের লোকজন কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন।

সুমন আহমেদের বাবা রফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার মাগরিবের নামাজের কিছুক্ষণ আগে এই ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে তার ছেলে আর ফেরেনি। এলাকার লোকজনের কাছ থেকে জানতে পারেন, রাস্তা থেকে ছেলেকে ধরে নিয়েছে পুলিশ।

থানার ফোনে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন আটক হওয়ার বিষয়টি। পুলিশের কাছে তার অপরাধ সম্পর্কে বারবার জানতে চাইলেও কিছু জানানো হয়নি।

"শনিবার মামলার নকল উঠিয়ে আমি জানতে পারি, একটা স্ট্যাটাসের কথা উল্লেখ করা আছে। এজন্যই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু এটা কার বিষয়ে লিখছে সেটা আমি জানি না," বলেন মি. ইসলাম।

ফেসবুকে কোনো স্ট্যাটাসের বিষয়ে জানেন না বলেই দাবি করেন মি. রফিকুল।

তিনি নিজে কিংবা তার ছেলে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয় বলেও দাবি করেন মি. ইসলাম।

যদিও অভিযুক্ত ছাত্রটি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেন কেন্দুয়া উপজেলা আহত জুলাই যোদ্ধা সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম জাসাম।

এবছর ঈদুল আজহার পর যাত্রা শুরু করা স্থানীয় সংগঠনটির এই নেতা বলছেন, "ফেসবুক পোস্ট সম্পর্কে জানার পর আমরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। পরে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে।"

মি. জাসাম বলছেন, "পোস্টটিতে তিনটি শব্দ ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে একটি ছিল কুরুচিপূর্ণ ও অপমানজনক। যা স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি করে।"

আটক সুমনকে আইন অনুযায়ী বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

২৭মে জুন রাতেই এই ঘটনায় সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা করে পুলিশ।

মামলার বাদি কেন্দুয়া থানার সাব-ইন্সপেক্টর রেজাউল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকেলে স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সুমনকে আটক করা হয়।

"সুমনের দেয়া ফেসবুক পোস্ট নিয়ে এলাকায় নানা আলোচনা চলছিল, উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছিল।"

রবিবার অভিযুক্তকে আদালতে তোলার কথা জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওই থানার আরেক সাব-ইন্সপেক্টর মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, "যে ধারায় মামলাটি করা হয়েছে সেটি অধর্তব্য। এটি অন্যান্য মামলার মতো না, আদালতের অনুমতি পেলেই তদন্ত শুরু করবে পুলিশ।"

এজাহারের উল্লেখ করে তিনি বলেন, "ফেসবুকে পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করেই সবকিছু। অভিযুক্ত নিজেও পোস্ট দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে বলেও জানান তিনি।"

নিজের মোবাইল থেকেই ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করার বিষয়টি অভিযুক্ত সুমন স্বীকার করেছে বলে দাবি করেন কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান।

তিনি জানান, "স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী নেয়া না হলেও সে প্রাথমিকভাবে বিষয়টি স্বীকার করেছে।"

এদিকে, সোমবার সন্ধ্যায় অভিযুক্তের বাবা রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, গ্রেফতারের তিনদিন পর তার ছেলেকে জামিন দিয়েছে আদালত।

তিনি বলেন, "ওর সাথে কথা বলেই জানতে পারবো আসলে কী হয়েছে, জেলগেটে আসছি ছেলেকে নিতে," বলেন মি. ইসলাম।

July 2025

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat
1
2
3
4
5
6
7
8
9
10
11
12
13
14
15
16
17
18
19
20
21
22
23
24
25
26
27
28
29
30
31
logo
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহ আহমদ

৩৭-০৫ ৭৩ স্ট্রীট, জ্যাকসন হাইটস, নিউইয়র্ক-১১৩৭২, ফোন: ৬৪৬৩০৯৬৬৬৫, সার্কুলেশন ও বিজ্ঞাপন ইমেইল: [email protected]

Copyright © all Rights Reserved.