শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সিরিজে সমতায় ফিরল বাংলাদেশ

ছবি: সংগৃহীত
জয়ের সূত্রটা কখনো কখনো খুব সোজা হয়ে আসে—টস ভাগ্যে থাকলে ব্যাটিংয়ে দেখে-শুনে শুরু করো, আর বোলিংয়ে বল ফেলো সোজা উইকেট বরাবর। শ্রীলঙ্কার মাটিতে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ঠিক এই ফর্মুলাতেই দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে ১৬ রানের জয়ে সিরিজে টিকে রইল বাংলাদেশ।
ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলাম, যিনি ওয়ানডেতে প্রথমবারের মতো তুলে নিয়েছেন ৫ উইকেট। তবে জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছেন ২০২০ সালের যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের এক ঝাঁক তরুণ, যারা এখন জাতীয় দলের মেরুদণ্ড হয়ে উঠছেন।
যদিও ৪৮তম ওভার পর্যন্তও ম্যাচের দখল যে কার হাতে যাবে, তা বোঝা কঠিন ছিল। জানিথ লিয়ানাগে তখন বাংলাদেশের দুশ্চিন্তার নাম। মাত্র ২৫ ম্যাচেই ৪৫ গড়, ৪টি সেঞ্চুরি এবং এবার আরেকটি হাফসেঞ্চুরির পথে তার পরিণত ব্যাটিং চোখে লেগেছে। এমনকি শ্রীলঙ্কার কোচ সনৎ জয়াসুরিয়ার বিশেষ নজরেও আছেন এই প্রতিভা।
কিন্তু মুস্তাফিজুর রহমান যখন ডেথ ওভারে এসে লিয়ানাগের মূল্যবান উইকেট তুলে নিলেন, তখনই ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়। এরপর দুশমন্তা চামিরাকে আউট করে ম্যাচের শেষটা নিশ্চিত করেন তানজিম হাসান সাকিব।
তানজিমের পারফরম্যান্স যেন ক্রিকেট রোম্যান্টিসিজমের নতুন গল্প লিখে গেল। হৃদয়ের সঙ্গে রান আউটের ঘটনায় জড়ানো সেই তানজিমই শেষদিকে ২১ বলে ৩৩ রানের অপরাজিত ইনিংসে দায় অনেকটাই মিটিয়ে দেন। বল হাতে দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচে ফেরার সেই লড়াই তাঁর ট্রেডমার্ক হয়ে উঠছে। অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ নিজেই বলেছেন, তাঁর রানগুলোই ছিল জয়ের অনুপ্রেরণা।
এ জয় অবশ্য শুধু একজনের কৃতিত্ব নয়। দলগত পারফরম্যান্সে ভর করেই এসেছে এই প্রত্যাবর্তন। রিশাদ হোসেনকে বসিয়ে তানভিরকে খেলানো নিয়েও উঠেছিল প্রশ্ন। তবে প্রেমাদাসার পিচে দ্বিতীয় ইনিংসে স্পিনারদের জন্য উইকেট বরাবর বল করাই ছিল সাফল্যের চাবিকাঠি—যেটি তানভির বুঝে কাজে লাগিয়েছেন। কুশল মেন্ডিসকে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ফিরিয়ে দেন, যিনি মুস্তাফিজের প্রথম ওভারে চারটি বাউন্ডারিতে চাপে ফেলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে।
অবশ্য সংবাদ সম্মেলনে মিরাজ পাশে বসা তানভিরের চেয়ে বরং প্রশংসা করেছেন শামীম হোসেনের খণ্ডকালীন স্পিনের। ব্যাট হাতে দৃঢ়তা দেখানোর পাশাপাশি বল হাতে ৯ ওভারে মাত্র ২২ রানে ১ উইকেট, তাও অধিনায়ক আসালঙ্কার—বিশাল কিছুই।
টানা সাত ম্যাচ হারার পর এই জয় তাই কেবল একটি ম্যাচ জয় নয়, আত্মবিশ্বাস পুনরুদ্ধারের মঞ্চ। যদিও ব্যাটিং ব্যর্থতায় ২৪৮ রানে গুটিয়ে যাওয়ার গল্পটাও আছে। শুরুতে পারভেজ হোসেনের উড়ন্ত শুরু থাকলেও বড় স্কোরে পৌঁছানো যায়নি।
তবুও মিরাজের নেতৃত্বে দলটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তানজিমের ইনিংস যেমন ছিল পার্থক্য গড়ার মতো, তেমনি দ্বিতীয় ইনিংসে ফিল্ডিং ও বোলিংয়ের দায়বদ্ধতাও স্পষ্ট ছিল। এই জয় সিরিজের ভাগ্য নির্ধারণ করবে পাল্লেকেলেতে। আর তার চেয়েও বড় প্রাপ্তি—এই দলের মানসিক দৃঢ়তা।
অবশ্য একটি ছোট পাদটিকায় এটাও লেখা যেতে পারে—পাঁচ ম্যাচ বিরতির পর অবশেষে উইকেটের দেখা পেলেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ, যাঁর অধীনে এটাই প্রথম আন্তর্জাতিক জয়।
July 2025
৩৭-০৫ ৭৩ স্ট্রীট, জ্যাকসন হাইটস, নিউইয়র্ক-১১৩৭২, ফোন: ৬৪৬৩০৯৬৬৬৫, সার্কুলেশন ও বিজ্ঞাপন ইমেইল: [email protected]